দীপক ঘোষের নতুন বইয়ে প্রশ্ন জীবনযাপন নিয়েও
বেআইনী ট্রাস্ট, দলের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ মমতার বিরুদ্ধে
নিজস্ব প্রতিনিধি
কলকাতা, ১৫ই এপ্রিল—বেআইনী ‘ট্রাস্ট’ গঠন করে কয়েক কোটি টাকা সংগ্রহ করার অভিযোগ উঠলো মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে। তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক তথা প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির সহ-সভাপতি দীপক ঘোষের লেখা নতুন বইতে উঠে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। ট্রাস্ট গঠন করে কোটি কোটি টাকার কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগই শুধু নয়, নির্বাচনী তহবিলে টাকা নয়ছয়, কংগ্রেসের কাছ থেকে ১০কোটি টাকা নেওয়া, তৃণমূল ভবনের বেআইনী নির্মাণ, মুখ্যমন্ত্রীর বিলাসবহুল জীবনযাপন সহ একাধিক অভিযোগ করা হয়েছে এই বইয়ে। দীপক ঘোষের লেখা নতুন বই ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৩বছর’’ মঙ্গলবার প্রকাশ হলো ভারতসভা হলে। উদ্বোধনী প্রকাশ করলেন সুনন্দ স্যানাল।
২০১২সালে ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যেমন দেখেছি’’ শীর্ষক বই লিখে তৃণমূলের রোষের মুখে পড়তে হয়েছে দীপক ঘোষকে। সেই বইয়ের কপি পুড়িয়ে দিয়েছিল শাসক দলের কর্মীরা। ফের তিনি নতুন বই লিখে মমতা ব্যানার্জির দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা প্রকাশ্যে আনলেন। এদিন নতুন বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে দীপক ঘোষ বলেছেন, সততার নামে মমতা ব্যানার্জি রাজ্যবাসীকে ধোঁকা দিচ্ছেন। গত তিন বছরে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা, শিল্প-বাণিজ্য, কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি ক্রমশ তলানির দিকে যাচ্ছে। ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রাজ্যকে। বড় বড় হোর্ডিংয়ে সততার প্রতীক মমতা ব্যানার্জির ছবি ছাপা হচ্ছে। আদপে তিনি বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন বলে দীপক ঘোষ অভিযোগ করেছেন। তাঁর লেখা নতুন বইতেও মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে সরাসরি দুর্নীতি ও অসততার অভিযোগ করা হয়েছে।
‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৩বছর’’ শীর্ষক বইয়ের পঞ্চম অধ্যায়ে ‘‘মমতা ব্যানার্জির অবিশ্রান্ত দুর্নীতি’’ শিরোনামে ৭৮পাতায় দীপক ঘোষ লিখছেন, ‘‘দলীয় সংবিধানের ১৩নং ধারায় (এইচ) উপধারায় প্রদত্ত ক্ষমতায় অপপ্রয়োগ করে মমতা ব্যানার্জি একটি বেআইনী ‘ট্রাস্ট’ গঠন করে তাকে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান বলে দেখিয়ে সন্পূর্ণ বেআইনীভাবে কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ করেছেন। আয়কর দপ্তরে ট্রাস্টটিকে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আয়কর ফাঁকি দিয়ে চলেছেন।’’
মুখ্যমন্ত্রীর দুর্নীতি সম্পর্কে বইয়ে তিনি আরো লিখছেন, ‘‘মমতা ব্যানার্জি তহেলকা কাণ্ডের অজুহাতে ২০০১সালের বিধানসভা নির্বাচনে বি জে পি’কে ছেড়ে কংগ্রেসের সঙ্গে জগাখিচুড়ি জোট বাঁধেন। ১৯৯৯সাল থেকে ২০০১সাল পর্যন্ত মমতা ব্যানার্জি রেলমন্ত্রী ছিলেন। দু’বছরে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন টাকা করেছে ভেবে বি জে পি নির্বাচনে মমতাকে টাকা দেয়নি। সুযোগ পেয়ে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি ও এক বেঁটে দাড়িওয়ালা সাংবাদিক কংগ্রেসের মন্ত্রী কমলনাথকে দিয়ে ১০কোটি টাকার টোপ দেন। দলীয় নেতাদের এড়াতে সেসময় মমতা ব্যানার্জি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটে লুকিয়ে ছিলেন। সেখানেই প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির ৬কোটি টাকা পান, তৃতীয় কিস্তির ২কোটি টাকা মুকুল নিয়ে মমতা ব্যানার্জিকে পৌঁছে দেয়। কিন্তু শেষ কিস্তির ২কোটি টাকা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে জমা পড়লে তিনি তা আত্মসাৎ করে পরে দলত্যাগ করেন। মমতা ব্যানার্জি যে ৮কোটি টাকা পেয়েছিলেন তার ২কোটি টাকার মধ্যে ১লক্ষ, ২লক্ষ করে দলীয় প্রার্থীকে ও নির্বাচনের অন্যান্য খাতে খরচ করেছেন। বাকি ৬কোটি টাকা দিয়ে তাঁর দাদা অজিত ব্যানার্জি পুরীর স্বর্গদ্বারে বিলাসবহুল এক হোটেল নির্মাণ করেন। ‘সোনার তরী’ নামকরণ হয় হোটেলের। সেই নামকরণ মমতা ব্যানার্জিই করেছিলেন। এই হোটেলে কলকাতায় যোগাযোগের ঠিকানা মমতা ব্যানার্জির কালীঘাটের ৩০বি, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাড়ি।’’
মমতা ব্যানার্জির জীবনযাপন সম্পর্কে ঐ শিরোনামেই দীপক ঘোষ লিখছেন, ‘‘কালীঘাটে তাঁর ছোট শোবার ঘরের মাথায় টালি থাকলেও পর্দার আড়ালে এয়ার-কন্ডিশনার আছে। তাঁর বাড়ির অফিস, ভিতরের প্রতিটি ঘর, প্রেসরুম সবই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। তাঁর নিজের গাড়ি নেই। তিনি সরকারী গাড়িও চড়েন না। তথাকথিত ভক্ত বা অনুগামীদের দেওয়া বিভিন্ন মডেলের দামী শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িই ব্যবহার করেন। সমস্তটাই লোক দেখানো।’’
বইয়ের ৭৯পাতায় দীপক ঘোষ লিখছেন, ‘‘তাঁর প্রতিটি শাড়িই ধনেখালির তাঁতী বিশেষ সরু সুতো দিয়ে বানায়। যিনি এই শাড়ি পাঠান তিনি ধনেখালির তৃণমূলের বিধায়ক অসীমা পাত্র। বিনামূল্যে তিনি সেইসব শাড়ি তাঁর দিদিকে দেন। বর্তমানে এই বিধায়কের বিরুদ্ধে এক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দলীয় কর্মীকে খুনের অভিযোগে সি বি আই তদন্ত করছে। সেই বিধায়কের বেনামে একটি পেট্রোল পাম্পও রয়েছে বর্ধমানের জি টি রোডের বুদবুদে। তাঁর বোন ধনেখালি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি।’’
এদিকে বাইপাসের ধারে তৃণমূল ভবনটি আদ্যোপান্ত বেআইনী বলে অভিযোগ করেছেন দীপক ঘোষ। বইয়ের ৭৭নং পাতায় তিনি লিখছেন, ‘‘বাইপাসের ধারে ৫কাঠা জমিতে গড়া ‘তৃণমূল ভবন’ নির্মাণের জন্য জমি দান করেন মন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান। তাঁর পারিবারিক কয়েক বিঘা জমি থেকে এই জমি দেওয়া হয়েছিল। জমির উপর তৃণমূল ভবনটি নির্মাণ হয় বেআইনীভাবে। এখানে অফিসের কাজকর্ম হলেও বাসগৃহ বলে কর্পোরেশনকে জানিয়ে কর ছাড় পাওয়া গেছে। এখানে মমতা ব্যানার্জির প্রায় ১২০০স্কোয়ার ফুটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। ফ্ল্যাটে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যক্তিগত অফিসঘর, সংলগ্ন অফিস ঘর, শোবার ঘর, সবই আছে। এর জন্য মমতা ব্যানার্জি ১টাকা ভাড়া দেন। ভবনটির পুরো নির্মাণ কাজ এখনও শেষ হয়নি। কর্পোরেশন সরকারীভাবে জলের ও পয়ঃপ্রণালীর সংযোগও দেয়নি, অথচ সবই আছে।’’ এছাড়া গত তিন বছর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা, কর্মসংস্থান নিয়ে ভুল তথ্য, বেকার ছেলেমেয়েদের চাকরির নামে ভাঁওতাবাজি, শিল্প-বাণিজ্য সম্পর্কে ধোঁকাবাজির একাধিক তথ্যও রয়েছে দীপক ঘোষের নতুন বইতে। এদিন এই বইয়ের উদ্বোধনে অর্থনীতিবিদ রতন খাসনবিশ, অধ্যাপক দেবাশিস সরকার সহ বিশিষ্ট মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
Collected From Whatsapp post....
There is a definite Odisha angle in this case. It is strange that the CBI should remain unaware of this.
ReplyDelete